Voice of Father and Daughter
In Memory of Late Father Advocate Jagatbandhu
(J.B. SenGupta)
ত উন্নতমানের রেজাল্ট দেখে দেশপ্রিয় মহাখুশী হন এবং আইন বিভাগে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। দুই বৎসর পর তিনি আইন বিষয়ে ১ম স্থানে ১ম হন এবং এম.এল পড়ার স্কলারসীপ পান। এতে দেশপ্রিয় বাবাকে স্কলারসীপ নিয়ে এম.এল পড়ার জন্য বিদেশ যাবার উৎসাহ দেন। আইন পড়ার সময় তিনি জগন্নাথ হলের (১৯৩০-৩২ সনে) ভিপি হন।
দেশপ্রিয়ের উৎসাহে বাবা এম.এল পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করলে বাড়ির সবাই বাবাকে আর পড়াশোনায় নিরুৎসাহ প্রকাশ করেন। তারা একযোগে বলে সারাজীবন পড়াশোনা করবে নাকি। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে অনেক দায়িত্ব কর্তব্য আছে। এর পরে বাবা আইন পেশায় যোগ দেন। আইন পেশায় যোগ দিয়ে তিনি মক্কেলদের কাছ থেকে টাকা নিতেন না বরং নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে মক্কেলদের মামলা করে দিতেন। এতে পরিবারের সবাইর চাপের মুখে আইন পেশা ছেড়ে দিয়ে চাকুরীতে যাবার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন।
১৯৩৬ ইংরেজি বেঙ্গল রেভিনিউ বোর্ডের অধীনে কোট ওয়ার্ডের সার্কেল ইন্সেপেক্টর পোস্ট এ ময়মনসিংহে পদায়িত হন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৬ইং পর্যন্ত ময়মনসিংহে অনেক কৃতিত্বের পরিচয় দেন। সেখানে সম্বানিত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসেন। যেমন অন্নদাশংকর রায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাণীমাতা, বিনীতা রায়, উৎপলাক্ষ রায় প্রমুখ আরো অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ। বাবার চাকুরীর সূত্রে আমার মা শ্রীমতি কুন্দপ্রভা সেনগুপ্তা ও বহু মেধার পরিচয় দেন।
১৯৪৭ ইংরেজিতে সমগ্র ভারত ইংরেজ মুক্ত হলে অর্থাৎ স্বাধীন হলে পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশ হয়ে যায়। তাই দুই দেশের মধ্যে চাকুরীর বিনিময় হয়। তখন শ্রীযুক্ত ভুপেন্দ কিশোর রক্ষিত রায়, অন্নদা শংকর রায় প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ পূর্ব পাকিস্তান থেকে চাকুরীতে ড়ঢ়ঃরড়হ দিয়ে ভারতে চলে যান। বাবাকে তারা এবং মাস্টারদার সারথি শ্রীযুক্ত লোকনাথ বল প্রমুখ অনেকে এভাবে ড়ঢ়ঃরড়হ দিয়ে ভারতে চলে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু বাবার পরিবারবর্গ বাবাকে চাকুরী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে নির্দেশ দেন। খালি এক কথা বড়ছেলের পরিবারের প্রতি অনেক দায়িত্ব আছে।
১৯৪৭ইং দেশভাগ হবার পর ১৯৪৮ইং থেকে আবার ওকালতি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ফিরিঙ্গি বাজারের শিববাড়ি লেনের মুখে বাসাভাড়া নেন এবং চেম্বার খুলেন। আইন পেশার পাশাপাশি মোক্তারশিপ কলেজ খুলেন। প্রথমে তিনি চারজন ছাত্র নিয়ে এই কলেজ আরম্ভ করেন। এই চারজন ছাত্র হলেন বাবু ননী দাশগুপ্ত, হিমাংশু ঘোষ (স্বর্গীয়), ধীরেন্দ্র লাল দত্ত (স্বর্গীয়), জনাব মোজাম্মেল হক। তাঁদের দুজন এখনও আইন পেশায় প্রতিষ্ঠিত।
এর পরবর্তী পর্যায়ে মোক্তারশীল-কলেজ খুব প্রসার লাভ করে। ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্ররা ভর্তি হন এবং মোক্তারী পাশ করে বেশ প্রসার লাভ করে। এখনও অনেক আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক অর্ডিন্যান্স (ড়ৎফরহধহপব) মূলে সকল মোক্তারগণকে এডভোকেট হিসেবে সনদ প্রদান করার আদেশ দেন। এরপর থেকে মোক্তার বলে কেউ নেই। সবাই মূলধারায় মিশে গেছে। পরবর্ত্তীকালে কলেজটি বন্ধ হয়ে যায়।
ইতোপূর্বে ১৯৬০ ইংরেজিতে জনাব বাদশা মিয়া চৌধুরী ও জনাব ইউ.এন সিদ্দিকী সাহেবদ্বয় বাবাকে চট্টগ্রাম ল কলেজে হিন্দু ল’ পড়াবার জন্যে নিয়োগ দেন। সেখানেও বেশ কৃতিত্বের সাথে খ্যাতি অর্জন করেন। ছাত্রছাত্রী এবং সহকর্মীদের সাথে অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৬০ ইংরেজি থেকে ১৯৮০ ইংরেজি পর্যন্ত অর্থাৎ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বিশ বছরে বহু ছাত্রছাত্রী উপযুক্তভাবে তৈরী করে গেছেন।
ওকালতি পেশায় বহু গরীব দুঃখী তাঁর উদার মানসিকতার দ্বারা বহু উপকৃত হয়েছেন অসহায় জনগণের উপকার করাটা যেন তার নৈতিক দায়িত্ব ছিল। রহমতগঞ্জের খান বাহাদূর পরিবারের ডলি বেগমের ব্যক্তিগত লয়ার হিসেবে বহু উপকার করে গেছেন। জনাবা ডলি বেগম বাবাকে খুব বিশ্বাস করতেন এবং নির্ভর করতে পারতেন।
তেমনি নিজ পরিবারে তাঁর কাকিমা মিসেস নেলী সেনগুপ্তার ব্যক্তিগত লয়ার হিসেবে অনেক উপকার করেছেন। মিসেস সেনগুপ্তা ও বাবাকে সর্বক্ষণ পাওয়ার জন্য তাঁর রহমতগঞ্জ বাসার কাছে কিছু জায়গা দিয়ে কাছে পেতে চেয়েছিলেন। কারণ বাবা মিসেস সেনগুপ্তার কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক নিতেন না। সেজন্যই মিসেস সেনগুপ্তা বিনিময়ে জায়গা দিয়ে ঋণ শোধ করতে চেয়েছিলেন। এটা ১৯৬৫ ইংরেজির কথা। এখন অবতরণা করি রহমতগঞ্জের বাবার বাড়ির জায়গা খরিদ করার ইতিহাস।
১৯৬০ ইংরেজিতে প্রবর্তক সংঘের মৈত্রী ভবনের মাঠে উপমহাদেশের বিশিষ্টজন যতীন্দ্র মোহন সেনের স্ত্রী মিসেস নেলী সেনগুপ্তার জন্মদিন করা উপলক্ষ করে বিরাট আয়োজন করেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট পাঁচ চৌধুরী আমি এই পাঁচ চৌধুরীর নাম বল্লাম না। এই কারণে তাঁদের মৃত আত্মার কলঙ্ক করার উদ্দেশ্য নয়। এই সভার বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ছিলেন, এই পাঁচ চৌধুরীর একজন বিপ্লবী চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত মিসেস নেলী সেনগুপ্তার সাহায্যকারী হিসেবে পাশে পাশে থাকতেন। তবে আমার বাবাকে মিসেস সেনগুপ্তা পাশে রাখুক এটা তিনি পছন্দ করতেন না। মিসেস সেনগুপ্তার তখন সাংঘাতিক আর্থিক দৈন্য।
এই সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল মিসেস সেনগুপ্তার নামে একটি ফাণ্ড তৈরি করা। অর্থাৎ চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা। চট্টগ্রামের অনেক বিশিষ্টজন বাবু মনীন্দ্র লাল দাশ বর্মণ (কোদালা টি এস্টেট এর মালিক) এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য আঁচ করতে পেরে বাবাকে বললেন আসল ঘটনা কি। যাহোক চট্টগ্রামের বিশিষ্ট গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এই বিপ্লবী চৌধুরীর হীন উদ্দেশ্য যখন আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গের কাছে প্রকাশ পেয়ে গেল তখন জনাব এ.কে. খান, গভর্নর জাকের হোসেন সাহেব, জনাব ইউ.এন সিদ্দিকী প্রমুখ সকলে বিপ্লবীকে ধিক্কার দিয়ে বলেছিলেনÑ “ছি; উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট গন্যমান্যজনের স্ত্রীকে আপনি ভিক্ষার থলি হাতে ধরিয়ে দিলেন? এই সভার কি প্রয়োজন ছিল?” এই কথা বলে উনারা সভা ছেড়ে উঠে চলে গেলেন। এরপর বাবু মনীন্দ্রলাল দাশ বর্মণ, মনীন্দ্রলাল সরকার আমার বাবা উঠে দাঁড়িয়ে বল্লেনÑ “উনার যেসব সম্পত্তি আছে সেসব বিক্রি করেও তো উনি বেশ চলতে পারেন।” বিপ্লবী দাঁড়িয়ে উনাদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেতাই অপমানসূচক বাক্য ছুড়ে মারলেন। সভা ভেঙ্গে গেল।
ব্যাপারখানা যখন মিসেস সেনগুপ্তা জানতে পারলেন তিনি রেগে গিয়ে বিপ্লবীকে উনার বাংলোয় যেতে বারণ করে দিলেন। শেষে মিসেস সেনগুপ্তা আমাদের নিয়ে বাসায় গেলেন। বাবা যেকোন সভা সমিতিতে আমরা দুবোন ও মাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
এই সভার সপ্তাহখানেক পরে ওসঢ়বৎরধষ ওহংঁৎধহপব থেকে বাবার নামে ২৫০০ টাকার একটা চেক আসে। বাবা মিসেস সেনগুপ্তার আর্থিক দৈন্যতার কথা ভেবে তাঁর সাথে আলোচনা করে তাঁর অনুমতি নিয়ে প্রবর্তক ব্যাংকে মিসেস সেনগুপ্তার একাউন্টে জমা দেন।
এক মাস পরের ঘটনা। হোটেল সফিনার মালিক হাশেম সাহেব বাবার মক্কেল ছিলেন। রহমতগঞ্জের ইলেকশন অফিসটা তাঁর বাড়ি। তাঁর একটি গ্যারেজ এর প্রয়োজন। তিনি বাবাকে প্রস্তাব দিলেন বর্তমান শিশুবাগ ও বাংলা কলেজের পিছন দিক দিকের টিলাটা থেকে এক কড়া জায়গা দিলে তিনি মিসেস সেনগুপ্তার কাছ থেকে উপযুক্ত দাম দিয়ে কিনে নেবেন। বাবা মিসেস সেনগুপ্তাকে প্রস্তাবখানা দেন, মিসেস সেনগুপ্তা রাজী হন। কিন্তু এক কড়া জায়গা কাটতে গিয়ে প্রায় দুইগন্ডা জায়গা টিলা থেকে ধ্বসে পড়ে। মিসেস সেনগুপ্তা এতে রেগে যান এবং বাবাকে নির্দেশ দেন হাশেম সাহেবের বিরুদ্ধে কেস দেবার জন্য। হাশেম সাহেব এতে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পুরো দুইগন্ডা জায়গা উপযুক্ত দাম দিয়ে কিনে নেন। মিসেস সেনগুপ্তা এতে খুশী হন। পরবর্তীতে সেটা রেশনের দোকান হয়। বর্তমানে এটা দুইতলা বাড়ি এবং নীচের তলায় একটা গ্রোসারীর দোকান আছে এখন সম্ভবত রেশনের দোকানের বদলে সম্ভবত ফার্নিসারের দোকান হয়েছে।
পরবর্তীতে মিসেস সেনগুপ্তা বাবাকে নির্দেশ দেন চপলার (সেনগুপ্ত পরিবারের কর্মচারী) বাড়ির পাশে যে ডোবাটি আছে সেটা যেন টিলা কাটা মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলে এবং রাস্তার উপর যে দেড়গন্ডা খালি জায়গা আছে (সেটা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মায়ের শ্মশান) সেটা এবং ডোবা ভরাট করা জায়গাটিও যেন বাবার নামে ৎবমরংঃৎু করে নেন। কারণ বাবাকে তখন মিসেস সেনগুপ্তা তাঁর ংঃধঃব এর লয়ার হিসেবে দেখাশোনা করার পুরোপুরি দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন।
বিপ্লবী কিছুতেই বাবাকে সহ্য করতে পারছিলো না। সেই ডোবা যখন ভরাট হয়ে গেল তখন বিরাট জায়গা দেখা গেল। বিপ্লবীসহ পাঁচ চৌধুরী গং একটা মিথ্যা ডকুমেন্ট তৈরী করে মিসেস সেনগুপ্তাকে দেখাল যা থেকে মিসেস সেনগুপ্তা বাবার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা ঋৎধঁফ ্ ঈযবধঃবৎ ঈধংব দিল। এটা বিপ্লবীর ষড়যন্ত্র ছিল কারণ মিসেস সেনগুপ্তা বাবাকে কেন ব্যক্তিগত লয়ার নিয়োগ করেছিল, সেটা বিপ্লবীর সহ্য হচ্ছিল না।
ঈধংব চলতে থাকে। একদিন কেস চলাকালে জেরার সময় মাননীয় হামিক মিসেস সেনগুপ্তাকে জেরা করলেন। আপনি আপনার ব্যক্তিগত লয়ার জগদ্বন্ধু সেনগুপ্তকে টিলা কাটা মাটি দিয়ে ডোবা ভরাট করতে বলেন নি? উত্তরে মিসেস সেনগুপ্তা নীরব থাকেন। কারণ একজন ইউরোপীয়ান লেডি মিথ্যা বলতে পারেন নি। তাছাড়া বাবার দেয়া আড়াই হাজার টাকার চেক ও বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘদিন ওকালতি করার কথা ভেবে নীরব ছিলেন। এতে হাকিম সকল ঘটনা বুঝতে পারলেন।
এভাবে যখন দেখা গেল কেস হালকা হয়ে যাচ্ছে রহমতগঞ্জের সেই এলাকার পাড়ায় বসবাসকারী একজন অধ্যক্ষ মিসেস সেনগুপ্তা ও বাবার মধ্যস্থ হয়ে পড়সঢ়ৎড়সরংব করে দেন। এই ব্যাপারে বিপ্লবী বাবার সাথে নিন্মস্তরের আচরণ নিয়ে বিবাদ করেন।
এরপর মিসেস সেনগুপ্তা বুঝতে পারেন, এই কেইস এর পিছনে বিপ্লবীর কূটকৌশল কাজ করেছে। তখন বিপ্লবীকে ডেকে মিসেস সেনগুপ্তা বাসায় আসতে নিষেদ করে দেন। বাবাকে ডেকে বলেন সেই অধ্যক্ষের মধ্যস্ততায়। রহমতগঞ্জের নির্বাচন অফিসের গেটের বিপরীতের দেড়গন্ডা জায়গায় বাড়ি করতে এবং ৎবমরংঃৎু দেন।
এই কেইস এর পর আমি সবসময় বাবার সাথে সাথে থাকতাম। বাবাকে সাবধান করে দিলাম মিসেস সেনগুপ্তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ যেন না রাখেন। কারণ মিসেস সেনগুপ্তা একবার বিপ্লবীর পক্ষে একবার বাবার পক্ষে এসব ডিগবাজী খাওয়া স্বভাবের জন্য বাবাকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলাম।
যাত্রামোহন সেনের ছোট ছেলে বীরেন্দ্র মোহন সেনের স্ত্রী প্রতিভা সেনগুপ্তা ও পুত্র মিলন সেনগুপ্ত আগে থেকে বরমার জায়গাজমি নাম খারিজ করা বিক্রি করা এসব নিয়ে ঝামেলা করত। আমি তাদের বলে দিলাম তারা যেন বাবাকে জ্বালাতন করতে আর না আসে। কারণ বাবা নেলী সেনগুপ্তার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেবার পর বিপ্লবী চৌধুরী মিসেস সেনগুপ্তার পি.এস. হয়ে আবার উনার পাশে গেছেন। তারা যেন বিপ্লবীর কাছে যায়।
৬৮ ইংরেজিতে বাবা সেনের চরের জমি বিক্রি করে রহমতগঞ্জের বাড়ি তুলতে আরম্ভ করলেন। বাবাকে কিন্তু মিসেস সেনগুপ্তা আবার খবর দিতে থাকেন। আমি বাবাকে মনে করেদিলাম মিসেস সেনগুপ্তার ডিগবাজী খাওয়া স্বভাবের জন্য বাবার নামে মিথ্যা বদনাম হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে শুনলাম মিসেস নেলী সেনগুপ্তার বড় ছেলে শিশির সেনগুপ্ত মদ খেয়ে বাংলোর নীচের তলায় বসবসাকারী যাত্রামোহন সেনের ছোট ছেলে ফনীন্দ্র মোহন সেনকে মদের বোতল দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে রাতারাতি পাকিস্তান চলে গেছে। ফনীন্দ্র মোহন সেনের জায়গা জমিতে নাম খারিজ করতে মত দিচ্ছেনা কেন। তখন সেনগুপ্তার পি.এস. ছিল বিপ্লবী চৌধুরী। এদিকে প্রতিভা সেনগুপ্তা ও মিলন সেনগুপ্ত নেলী সেনগুপ্তাকে নানানভাবে জ্বালাতন করতে লাগলো। মিসেস সেন এসব সহ্য করতে না পেরে বাবার কাছে লোক পাঠাতে লাগলো। তাঁর পি.এস. কে বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি তখন খাড়া। যে লোক আসে আমি তাদের ভদ্রভাবে বিদায় করে দিই।
এরপর আবার যখন লোক পাঠালেন তিনি আমাকে বোঝালেনÑ দেখ যদিও পি.এস. চৌধুরী রয়েছেন উনার দুর্দিন আবারো বেড়ে গেছে। বুঝতে পারছি তোমার বাবার সাথে বিরাট অন্যায় করে ফেলেছেন। এখন উনি খুব অনুগুপ্ত দরকার হলে তুমিও তোমার বাবার সাথে চল।
অগত্যা আমিও বাবার সাথে গেলাম। নেলী সেনগুপ্তা বাবাকে দেখে কেঁদে ফেললেন এরপর ক্ষমা চাইলেন হাতজোড় করে। আমি জিজ্ঞাসা করলামÑ এৎধহহু যিবৎব রং ুড়ঁৎ খড়াঁবৎং ধহফ ৎবষরধনষব ড়হবং? আপনার ঘোর মহাবিপদে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না কেন? তিনি কেঁদে ফেললেন। বাবাকে বল্লেনÑ গু ংড়হ ভড়ৎমরাব সব. ও ধস ংঁভভবৎরহম ফঁব ঃড় ুড়ঁৎ পঁৎং. ঋড়ৎমরাব সব. ওঃ রং (….) যিড় সরংমঁরফবফ সব ধহফ সু ংড়হ শিশির ঢ়ষবধংব ভড়ৎমরাব সব.
তারপর বল্লেন মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে কোলকাতা যাবার জন্য চষধহব এর টিকেট পাঠিয়েছেন। এখন এই সমস্ত ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু’র ঢ়ড়বিৎ ড়ভ ধঃঃড়ৎহবু বাবাকে দিতে চান। আমি বল্লাম অসম্ভবব আমার বাবা এ কাজ করবেন না। আপনি আপনার পি.এসকে দিয়ে দেন।” বলে বাবাকে টানতে টানতে নিয়ে আসলাম। পেছন ফিরে দেখলাম তিনি চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। তখন আমার বাবাকে ভবিষ্যৎ বিপদ থেকে রক্ষা করা পবিত্র ধর্ম ছিল।
পরে শুনলাম তাঁর পালিত কুকুরের উপর পড়ে কোমড় ভেঙ্গে ফেলেছেন। বরমা ও রহমতগঞ্জের সমস্ত ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু তাঁর পি.এস. বিপ্লবী চৌধুরীকে ঢ়ড়বিৎ ড়ভ ধঃঃড়ৎহবু দিয়ে চলে গেছেন।
মনে পড়ে অতীতের কত কথা, আজিজ গোডাউনের পেছনে ঢ়ৎরহপরঢ়ধষ সন্তোষ কাকার বাড়িটি তখনও ওঠেনি। বিরাট মাঠ ছিল। প্রত্যেকদিন সেই মাঠে মিসেস সেনগুপ্তা তাঁর একজন আইরিশ বান্ধবীকে নিয়ে গল্প করতে বসতেন। মাঝেমধ্যে আমরা দুবোন এবং মা সেখানে যেতাম। যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করতেন। অনেক গল্প হতো। গল্পের মধ্যে মূল বিষয় ছিল তাঁর শ্বশুর, শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকের গল্প। আমাদের বেশী আপ্যায়ন করতেন তাঁর শ্বশুর বাড়ি লোক বলে। তাঁর মুখে শোনা যাত্রামোহন বাবু একসঙ্গে আটজন ছেলেকে বিলাত পাঠিয়েছিলেন। তাঁর শ্বাশুড়ী খুব সহজসরল ছিলেন। যাত্রামোহন স্ত্রীকে খুব শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালবাসতেন। তিনি নাকি বলতেন তাঁর শ্বশুড় ড. খাস্তগীরের কৃপায় এমন ভাগ্যলক্ষ্মী স্ত্রী পেয়েছেন। যারজন্য শ্বাশুড়ের নামে স্কুল দিলেন ড. খাস্তগীর বালিকা স্কুল এবং শ্বাশুড়ীর নামে দিয়েছেন কুসুমকুমারী গার্লস হাই স্কুল এবং বরমায়, মা বাবার নামে ত্রাহি মেনকা হাইস্কুল ও প্রাইমারী স্কুল অর্থাৎ বাবা ত্রাহিরাম ও মা মেনকা সুন্দরীর নামে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেনগুপ্ত পরিবারের লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ থাকতেও এই স্কুল কমিটি সেনগুপ্ত পরিবারের কেউকে কোনদিন কোন আপ্যায়ন করেননি এবং কমিটিতেও রাখেননি।
যাক চট্টগ্রাম এসোসিয়ান আছে এই বিশাল সম্পত্তি দেখাশোনা করার জন্য। কিন্তু মিসেস সেনগুপ্তার বাংলোখানা কোথায় গেলো এবং আশেপাশের জায়গা জমিগুলো কোথায় আছে?
বাবা ১৯৬৮ইং থেকে সেনের চরের জমি বিক্রি করে রহমতগঞ্জের বাড়ি তুলতে লাগলেন। এর মধ্যে ৭১ এর যুদ্ধ লেগে গেল। দেশ স্বাধীন হবার পর এসে দেখলেন ইট, কাঠ, বাঁশ সব লুট হয়ে গেছে। বাবা আবার বাড়ি তুলতে লাগলেন। এর মধ্যে শুনলাম মিসেস সেনগুপ্তাকে ভারতে কারা যেন পৌঁছাইয়ে দিয়ে এসেছে।
৭৪-এ আমরা রহমতগঞ্জের বাড়িতে উঠলাম। যাথারীতি দিন কাটছে। ৭৬-এ আমার ছোট বোন কোলকাতায় চলে গেল সঙ্গে মা গেলেন। বাবা ইন্দু কাকাকে বাসায় নিয়ে এলেন। আমিও বাচ্চা নিয়ে বাবার কাছে চলে এলাম। কারণ স্বামী সিলেটে চাকরী নিয়ে চলে গেছেন। বাসায় আমি বাচ্চা বাবা ও ইন্দু কাকা। মা ও অলি যখন ভারতে চলে গেলাম বাবা বাড়িখানা বিক্রি করে ভারতে চলে যাবার চিন্তা করলেন। মা বাড়ি বিক্রির তাগাদা দিতে লাগলেন। এডভোকেট সুনীল সরকার একজন মুসলিম ব্যবসায়ী এনে দিলেন। যেহেতু জায়গাটিতে যাত্রা মোহন সেনের স্ত্রীর শ্মশান ছিল বলে নীতিগতভাবে বাবা মুসলিমের কাছে বিক্রি করার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই তিনি ক্রেতার অনুসন্ধান করতে ছিলেন।
৮১ জানুয়ারিতে একজন হিন্দু চার্টার্ড একাউন্টেডের সাথে কথাবার্তা হলো। পাকা কথা ছিল বাবা যতদিন ভারতে না গিয়ে থাকবে নীচের তলায় বাবা এবং আমরা ভাড়াটিয়া হিসবে থাকবো। কথাটা ছিল আমার পিসাতুত দাদা এডভোকেট চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্তের মাধ্যমে তবে মৌখিকভাবে।
আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের লেকচারার। আমি তখন ক্লাসে। প্রিন্সিপালের পিয়ন এসে আমাকে বললেন স্যার আমাকে এই মুহূর্তে ডাকছেন। আমি ক্লাস রেখেই অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতেই তিনি আমাকে ফোনের রিসিভারটা ধরতে বললেন। ফোনের ওপাশ থেকে যার কল পেলাম তিনি ইলেকশান কমিশনারের স্ত্রী। বল্লেন আপনারা কেউ নেয়। যাদের কাছে আপনারা বাড়ি বিক্রি করেছেন তারা ট্রাক নিয়ে এসে আপনাদের জিনিষপত্র ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি রিসিভার রেখে অধ্যক্ষকে সব ঘঠনা বললাম। তিনি তৎক্ষনাৎ মেট্রোপলিন পুলিশ কমিশনারকে ফোনে জানিয়ে দিলেন এবং আমাকে বললেন ৩য় বর্ষ অনার্সের অর্থনীতির ছাত্র ইকবাল পুলিশ কমিশনারের ছেলে ওকে নিয়ে আপনি বাসায় যান।
আমি ইকবালকে নিয়ে বাসায় পৌঁছাবার আগেই ৩/৪ জন পুলিশসহ পুলিশ অফিসার বাসায় পৌঁছেছেন। গিয়ে দেখি বাবা বাসায় নেই। বাসার ফার্নিচার রাস্তায়। বিশাল একটি ট্রাক। বাবার চেম্বারে পুলিশ সহ সেই সি.এ. এবং তার আত্মীয় বসা। পুলিশ অফিসার তাঁদের নানান কথা জিজ্ঞাসা করছেন। আমাকে দেখার সাথে সাথে পুলিশ অফিসার উঠে দাঁড়ালেন। আমি সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বল্লাম। কিছুক্ষণ পর বাবা আসলেন। বাবার সামনে পুলিশ অফিসারকে সি.এর আত্মীয় বলছে উনার বাড়ি বেচা টাকা কি করেছেন জিজ্ঞাসা করুন। অথচ সেই আত্মীয় বাবার ল কলেজের ছাত্র। বাবা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ডাক্তার ডেকে বাবাকে সুস্থ করা হোল।
বাবাকে ভিতরে নিয়ে শুইয়ে দিলাম। ইকবাল আমার কাছে এসে বল্লেন, মেডাম উনার (সি.এ’র) আত্মীয় নাকি বৃন্দাবন আখেরা থাকার ঘর ঠিক করেছে। তিন মাসের ভাড়া উনারা দেবেন মাসে এক হাজার করে। আপনারা যদি না যান বাড়ি বেচা টাকার কথা ডি.বি কে জানাবে। অগত্যা বাবার সামর্থ্যরে দিকে তাকিয়ে আমি রাজি হয়ে গেলাম। কারণ কথাটা হয়েছিল মৌখিক চিত্তদার মাধ্যমে। কিন্তু চিত্তদা বাসায় এসে খোঁজও নিল না।
পরদিন আমরা বাবাকে নিয়ে বৃন্দাবন আখেরার বাসায় উঠলাম। বাসা থেকে বের হতে কি করুণ দৃশ্য। বাবার হাতে লাগানো নারকেল গাছে ছাদ দেয়ালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। খালি দীর্ঘ নিঃশ্বাস বাড়িটা বিক্রি করার ইচ্ছে ছিলনা।
বাবা বৃন্দাবন আখেরার বাসায় এসে খালি চিন্তিত থাকতেন। ৮১’র ফেব্র“য়ারির ১৭ তারিখ আমরা বৃন্দাবান আখেরার বাসায় আসি। এর মধ্যে বাবার বন্ধুবান্ধব অনেকে এসে দেখে গেছেন। আলাপ করে গেছেন। রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক বাবু গিরিন মসুজদার এসে বাবার সাথে দেখা করে গেছেন।
২০শে ফেব্র“য়ারি বাবা সন্ধ্যার সময় অর্ধশায়িত অবস্থায় আমাদের ডেকে বল্লেন আমি নির্বানের পথে যাচ্ছি। চোখ দুটো অর্ধনিমিলিত চোখের পুতুল দুটো শিবনেত্র হয়ে আছে। আমি ভয়ে আঁৎকে উঠলাম। আমার স্বামীকে বল্লাম ডাক্তারকে খবর দাও। কাছে ছোট ভাই (খুড়ত্তুত) এডভোকেট প্রণব সেনগুপ্ত। সে তাড়াতাড়ি আসলেন। ডা. প্রফেসর সোবহান সাহেবকে আনলেন। বল্লেন এবং ওহলবপঃরড়হ দিয়ে বল্লেন আজকের দিন চেয়ে আগামীকাল ঈষরহরপ-এ ভর্তি করাল।
তাই হলো গবফরপধষ ঈবহঃবৎ লালখানবাজার সেখানে ভর্তি করে ৩রা মার্চ ইহলোক ত্যাগ করলেন। এই হলো রহমতগঞ্জের বাসার কাহিনী।
Reviews
There are no reviews yet.