ভূমিকা
জামাল উদ্দিন এক বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে কি বিশেষণে তাঁকে চিহ্নিত করবো ভেবে কূল পাই না। তিনি লেখক, ঐতিহাসিক, গবেষক, পত্রিকা সম্পাদক, প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী- কোনটা বলবো তা বুঝতে পারি না। সর্বক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ সমভাবে বিদ্যমান। তাঁর দু’খণ্ডের ‘দেয়াঙ পরগনার ইতিহাস’ (আদিকাল ও আধুনিক কাল), ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস-জনবসতি, নামকরণের যৌক্তিকতা, কাল নির্ণয়, পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’, ‘মোগল সাম্রাজ্যের বিলুপ্ত অধ্যায় দোহাজারী’, ‘বার আউলিয়ার চট্টগ্রাম’, ‘শাশ্বত চট্টগ্রাম’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চাকমাজাতি’ গ্রন্থগুলো পড়লে তাঁকে স্থানীয় ইতিহাস প্রণেতা না বলে উপায় নেই। আবার তাঁর ‘আনোয়ারা : একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর’ গ্রন্থদুটো পড়লে যখন জানতে পারি তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, তখন তাঁর পরিচয় দেশপ্রেমিক হিসেবে আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । তিনি অবশ্যই দেশপ্রেমিক। তার প্রমাণ, তাঁর রচিত ইতিহাস গ্রন্থগুলো। জন্মভূমির ওপর অকৃত্রিম ভালবাসা না থাকলে জামাল উদ্দিন, চট্টগ্রামের ইতিহাসের ওপর একাধিক গ্রন্থ লিখতে পারতেন না। তাঁর ‘ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম : মাস্টারদা সূর্য সেন ও সূর্যসাথীরা’ বইটিও গভীর স্বদেশানুরাগের পরিচয় বহন করে।
জামাল উদ্দিনের লেখা ইতিহাসগুলো অনেক অজানা তথ্যে ভরপুর এবং তাঁর প্রতিপাদ্য বিষয় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তিনি প্রামাণ্য গ্রন্থ, দলিলপত্র ও মতামত ব্যবহার করতে মোটেই কার্পণ্য করেন না। তাছাড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেও তিনি যতটা সম্ভব বস্তুনিষ্ঠ।
বাঙলা আমার মা : বাঙালি বাংলার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর প্রকাশিতব্য বইটিতেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বইটিতে রয়েছে ৪৮টি নিবন্ধ, যার মধ্যে আমরা পাই বাংলা ও বাঙালির পূর্ণ পরিচয়। এখানে বাংলা শব্দের জন্ম ও বাংলা ভাষার উদ্ভবের কথা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলার আদি থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বাংলা নামের দেশ ও বাঙালির পরিচয়। এমন কি তাতে বাংলায় ইউরোপীয়দের আগমন, ব্রিটিশ শাসন, বাংলায় নব জাগরণ, পাকিস্তান সৃষ্টি ও পাকিস্তানী শাসনামলে বাঙালির আন্দেলন-সংগ্রামের কথাও বাদ পড়েনি। বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যূদয়, ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদানের কথাও এতে রয়েছে।
উপসংহারে লেখক সগর্বে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি বাঙালি। ভাবে-ভাষায়-সংস্কৃতি-জাতীয়তার রসে সিক্ত প্রতিটি নিবন্ধেই রয়েছে লেখকের গভীর স্বদেশানুরাগের পরিচয়। অকৃত্রিম দেশপ্রেম না থাকলে এ ধরনের গ্রন্থ রচনা করা যায় না। আমার বিশ্বাস জামাল উদ্দিনের এই বই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে জানতে ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে প্রেরণা যোগাবে। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
অরুণ দাশগুপ্ত
Reviews
There are no reviews yet.