মনীষী কার্লাইল বলেছেন, একটি জাতির মহৎ মানুষগুলোর জীবন ও জীবনী হলো সে জাতির প্রকৃত ইতিহাস। কথাটি যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য তা আমরা উপলদ্ধি করতে পারি, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী পড়ি। ইংরেজ লেখক লর্ড ভ্যান্সিটার্টের জীবনী সম্পর্কে একটি মনে রাখার মতো মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “The lives of great men remind us which are sublime” কথাগুলো মনে এল ইতিহাস গবেষক ও বেশ কয়েক’টি খ্যাতিমান ব্যক্তির জীবনীকার জামাল উদ্দিনের লেখা “কর্ণফুলীর পালতোলা নৌকা” নাম ধেয় গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি পাঠ করে।
জীবনীগ্রন্থটি হলো, চট্টগ্রাম নগরবাসীর নয়নমণি বলে খ্যাত, কর্মবীর ও মানবদরদী এ. বি. এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। জীবন চরিত রচনা সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় যাঁর জীবনী লেখা হচ্ছে, তিনি যদি জীবিত ব্যক্তি হন তাহলে তাঁর প্রতি অভিনিবেশী পর্যবেক্ষণ। জীবনী বা চরিতকথা সম্বন্ধে ইংরেজ বুদ্ধিজীবী R.W. Emerson বলেছেন, “Bio-graphy is an unrivaled vehicle for telling truth about other people ” জীবনীকার জামাল উদ্দিন বুঝি সে কথা মনে রেখেই চৌধুরী সাহেবের জীবন চরিতটি কিছুটা সংক্ষিপ্ত কলেবরে উপস্থাপন করেছেন।
রাজা-রাজড়ার যুগে তাঁদের জীবনী লেখা হতো তাঁদেরই নির্দেশমত। এতে রাজাদের প্রকৃত জীবন ও চরিত্র ফুটে উঠতো না। এ-যুগে রাজাও নেই, তাদের পারিষদ- বিদূষকবর্গও নেই। তাই চরিতকারদের স্তুতি- তোষণের প্রয়োজনও হয় না। জামাল উদ্দিনের লেখা চরিতগ্রন্থ সে দিক থেকে ত্র“টি মুক্ত। তিনি মহিউদ্দিন সাহেবের কর্মকৃতি ও মন-মননের চিত্রটিই জীবন গ্রন্থটিতে তুলে ধরেছেন। মহিউদ্দিনের জীবনকে পাঁচটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ঐতিহাসিক চট্টগ্রামের অবস্থান, নিসর্গ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্ম-বংশ পরিচয়-শৈশব- বেড়েওঠা-ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক কার্যকলাপসহ নানা কর্মকাণ্ড। এ অধ্যায়ে মহিউদ্দিনের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, ভূমিকা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে চট্টগ্রাম শহরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, পৌরসভার ইতিহাস ও সিটি কর্পোরেশনের বিবর্তন এবং মেয়র নির্বাচনে মহিউদ্দিনের প্রথম বিজয় ও তারপর থেকে পর পর ৩ বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কাহিনি।
তৃতীয় অধ্যায় গ্রন্থিত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়ন ও মহানগরের শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তার ও স্বাস্থ্যসেবায় মেয়র হিসেবে তাঁর ভূমিকা।
চতুর্থ অধ্যায়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নীতি ও কার্যকলাপের সমালোচনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সর্বশেষ অধ্যায়ে রয়েছে রাজনীতিক হিসেবে মহিউদ্দিনের মন-মেজাজ, স্বভাব, নানা সেবামূলক কাজ, ভিন্নমতের রাজনীতিকদের প্রতি ব্যক্তিগত ব্যবহার ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টি ইত্যাদি। এইসব অধ্যায়ের উপসংহারে লেখক জামাল উদ্দিন কেন পালতোলা নৌকা পূর্বাপর ব্যাখ্যা করেন। জীবনী গ্রন্থটির ভাষা সাবলীল, সহজবোধ্য ও স্বচ্ছ। বক্তব্য পরিষ্ফুটনে কোন অসচ্ছতা নেই। আমার বিশ্বাস চরিতকথা লেখার উপর্যুক্ত ভাষা এ গ্রন্থটি চরিত সাহিত্যে একটি অমূল্য সংযোজন।
গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।
অরুণ দাশগুপ্ত
কবি ও সাংবাদিক
সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক আজাদী।
Reviews
There are no reviews yet.